ছবি: সংগৃহীত
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অন্যতম সেরা কীর্তি ছিলো সার্ক গঠন এবং একে একটি কার্যকরী আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়া। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) হবার অনেক আগেই তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি সংঘ করা কতোটা জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ার বেলায় তা ছিলো আরও অনেক বেশি জরুরি। কারণ এইসব দেশে বিপুল জনসংখ্যা থাকলেও সম্পদ সীমিত। প্রায় সবকটি দেশই দারিদ্যসীমার নিচে বসবাস করে। পরস্পরের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত কমিয়ে, অর্থনীতি ও বাণিজ্যসহ অন্যন্য খাতে সহযোগিতাই পারে এই অঞ্চলকে উন্নত করতে।
কিন্তু, এই অঞ্চলের একক পরাশক্তি ভারত তা হতে দেয়নি। ভারত সার্ককে অকার্যকর করে ফেলেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার বদলে ভারতের নীতি হয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর ছড়ি ঘুরানো। পাকিস্তানের সঙ্গে ধর্মসহ নানা বিষয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেশের জনগণকে উত্তেজিত রাখার নীতি নেয় সে দেশের রাজনীতিবিদরা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশটি একসময় পরিণত হয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে। পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও সার্কভুক্ত বাকি দেশগুলোর সাথে সাম্রাজ্যবাদী আচরণ শুরু করে দেশটি।
নব্বই দশকের শুরু থেকে ভারত মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতি গ্রহণ করে। কেবল রাজনীতি নয়, অর্থনৈতিক কারণেও এ সময় থেকে তারা বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকার মতো দেশের সাথে কলোনির মতো আচরণ করতে থাকে। ভারতের ইন্ধনে শ্রীলংকায় দীর্ঘসময় ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলে, নেপালের রাজনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হয়। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করে।
এই ব্যাপারটা চরম আকার ধারণ করে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকেই নিজেদের স্বার্থের একমাত্র শক্তি হিসেবে দেখা শুরু করার পর থেকে। অর্থনীতি আর রাজনীতিতে সুপারপাওয়ার হয়ে ওঠা ভারত হাসিনাকে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে সমস্ত রকম সহযোগিতা দেয়। বিনিময়ে এদেশের বাজার দখল করে, একের পর এক ব্যবসায়িক চুক্তি করে, একতরফা ট্রানজিট সুবিধা নেয়, উজানের দেশ বাংলাদেশকে নদীর ন্যায্য পানি হতে বঞ্চিত করতে থাকে। হাসিনা রীতিমত পুতুল সরকারে পরিণত হয়, বাংলাদেশ কার্যত করদ রাজ্যে পরিণত হয়।
তবে, এতো কিছু করেও হাসিনার রক্ষা হয় না। জনগণ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামায়, অবসান ঘটে বাংলাদেশের দীর্ঘতম স্বৈরশাসনের। আর এদেশে ভারত বিরোধিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তথাপি, ভারত পালিয়ে যাওয়া হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, ভারতের মিডিয়া এদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণের অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করতে থাকে। ভারত সরকারের হাবেভাবে মনে হয় যে কোনভাবে হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরানোই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু, এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না নিশ্চিত। বরং,ভারত আবারো পুতুল সরকার বসাতে চাইলে সেভেন সিস্টার্সসহ নানা স্থানে অবস্থা খারাপ হতে পারে। প্রতিবেশী দেশকে বৈরি করে তুললে যতো শক্তিধরই হোক, তা ভারতের জন্য প্রচন্ড অস্বস্তিকর হবে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, এই মুহূর্তে সার্কের বাকি দেশগুলোও তীব্রভাবে ভারতবিরোধী। মালদ্বীপে ভারত বিরোধিতাকে পুঁজি করে ক্ষমতায় এসেছেন মোহাম্মদ মইজ্জু। শ্রীলংকার কূটনীতি চীনের দিকে হেলে পড়া, নেপালও তাই। এমনকি ছোট্ট দেশ ভুটান দোকলামসহ বেশ কিছু ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আছে। আর পাকিস্তান তো আছেই। ফলে, হাসিনার পতনের পর ভারতের বোঝা উচিত, নিজের স্বার্থেই তাকে প্রভুত্ব বাদ দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে হবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে। আর বাকি ছয়টা দেশও বুঝছে যে, ভারতের আগ্রাসন থামাতে নিজেদের এক হওয়া দরকার।
সব মিলিয়ে, এই অঞ্চলের রাজনৈতিক সুস্থিরতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সার্ককে আবার শক্তিশালী করা।