কুরআনের হাফেজ, তাই বিসিএসে প্রথম হয়েও চাকরি হয়নি মারুফের!
হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রীয় বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ বছরে যারা বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়েও কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় চাকরি বঞ্চিত হয়েছেন তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে গেজেট জারি করেছে সরকার।
এর মধ্যে ৩৮ তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী বিল মারুফ বিন বারিকও চাকরি ফিরে পেয়েছেন। বুয়েটের এই শিক্ষার্থীকে কেবল কোরআনের হাফেজ হওয়ার কারণে চাকরি বঞ্চিত করা হয় বলে তার মা জানিয়েছেন।
বুধবার রাতে গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর তিনি এক ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানান।
তিনি লেখেন, 'আমার ছেলে বিল মারুফ, শিশুকাল থেকেই ওর মেধা অতি ক্ষুরধার। ওকে একই সাথে হাফিজ মাদ্রাসা এবং স্কুলে পড়িয়েছি, এতে করে সে কুরআনের হাফেজ, পাশাপাশি বৃত্তিসহ এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস এবং বুয়েটে ৪২ তম মেধাক্রমে চান্স পেয়েছিলো।
বুয়েট থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করার পর পিডিবির পাওয়ার প্ল্যান্টে ইন্জিনিয়ার পদে চাকুরী হয়। এটা শুনে আমি বলেছিলাম ঠিক আছে তুই তাহলে পিডিবিতে জয়েন কর। তার পাশাপাশি বিসিএসের এর জন্য প্রস্তুতি নে। চাকুরির পাশাপাশি অনেক কষ্ট করে পড়ত আমার ছেলে বিসিএসের জন্য। আমি ফোন দিয়ে খোঁজ নিতাম বাবা ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছিস তো , কুরআন পড়েছিস, বিসিএসের পড়া হচ্ছে এসব আর কি।
ও বলত মা বিসিএস আমার হবে না, অনেক পড়া আমি পারব না। আমি বলতাম পারবি বাবা একটু চেষ্টা কর ইনশাআল্লাহ্, তুই প্রথম বারেই চান্স পাবি। যেভাবে একই সাথে মেডিকেলে, বুয়েটে, ঢাবিতে চান্স পেয়েছিলি ঠিক সেভাবে বিসিএসেও তোর হয়ে যাবে।
আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে তার প্রথম বিসিএসে প্রিলিতে রিটেনে ও ভাইবাতে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করে । ওর বিসিএস এর রেজাল্ট পেয়ে আমাকে ফোন করল, মা আমি পররাষ্ট্র কাডারে প্রথম হয়েছি, আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে কেঁদে ফেলেছি। ফোনের ওপারে ছেলে কাঁদে এপারে আমি, দুই মা ছেলে প্রায় ৫ মিনিট কেঁদেছি। তারপর আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া নফল নামাজ আদায় করে আত্মীয় স্বজনদের এই খুশির খবর জানিয়েছিলাম।
এরই মধ্যে প্রায় ৩/৪ মাস কেটে গেল। সেই বিসিএসের গেজেট প্রকাশ হল । পররাষ্ট্র কাডারে ২৫ জন ছিল। ১ম বিল মারুফ বিন বারিক বাদ দিয়ে বাঁকি ২৪ জনকে গেজেট দেয়া হল। শুরু হল বিল মারুফের মায়ের আনন্দ অস্রু থেকে বেদনাশ্রু । স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের মন্ত্রানালয়ে অনেক ধরনা ধরে কোন কাজ হয়নি। কোর্টে রিট করেও কোন ফল হয়নি। আজ ১৪ আগস্ট ২০২৪ আমার ছেলে সেই গেজেট ফিরে পেল আলহামদুলিল্লাহ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট ফাসিস্ট স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার পতনের মাধ্যমে বাংলা দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে । নব নির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব হাতে নিয়ে পঁচে যাওয়া দেশটাকে পরিষ্কার করতে পরবেন ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ আমাদের বাংলাদেশকে রহম করুন। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে কাঁধে কাঁধ রেখে চল সবাই আমরা একসাথে দেশ গড়ি। সকলের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সুবিচারের দেশ হোক আমার বাংলাদেশ।'