Logo
Logo
×

সংবাদ

বেনজীরের যোগ্যতাহীন পিএইচডির পেছনেও সেই শিবলী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম

বেনজীরের যোগ্যতাহীন পিএইচডির পেছনেও সেই শিবলী!

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (ডক্টরেট ডিগ্রি) করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। কিন্তু এই ডিগ্রি নেওয়ার  প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই তার ছিল না। তার জন্য শর্ত শিথিল করেছিল ঢাবি কর্তৃপক্ষ। আর এজন্য সুপারিশ করেছিলেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও কমিটি।

দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনিয়মের সঙ্গে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নাম এটিই প্রথম নয়। মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে তার অর্থ পাওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গত বছর অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট বা ওসিসিআরপিতে প্রকাশিত জুলকারনাইন সায়েরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত জাভেদ মতিনের সঙ্গেও অধ্যাপক শিবলীর সম্পর্ক ও লেনদেনের কথাও বলা হয়।

প্রথম আলো জানায়, বেনজীর আহমেদ ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রাম থেকে। সেখানে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়। কিন্তু বেনজীরের স্নাতক ছিল না। এ ছাড়া শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। কিন্তু বেনজীরের শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়েই তা ছিল না।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সুপারিশে। তিনি ছিলেন বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান হন। এখনও সেই পদে রয়েছেন।  ভর্তি ও ডিগ্রি পাওয়ার সময় বেনজীর ছিলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। আর ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ছিলেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত অন্যতম ফোরাম বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের এক সভায় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বেনজীর আহমেদের ডিবিএ প্রোগ্রামে নিবন্ধনের অনুমতির সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশে বলা হয়েছিল, ২০১৩ সালের ৪ আগস্টের ডিনস কমিটির সভার সিদ্ধান্ত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সমতা নিরূপণ করে অনুমতি দেওয়া হোক।

বিএ (পাস) সনদ অনুযায়ী, বেনজীর মোট ১ হাজার ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫১৭ পেয়েছেন (৪৭ শতাংশ)। অর্থাৎ, তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। কিন্তু ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ডিগ্রি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৩০১ নম্বর (৬০ শতাংশ) পেয়েছেন। তাঁর বিএ (পাস) সনদে সাল উল্লেখ করা হয় ১৯৮২। ডিবিএর আবেদনে সাল বলা হয়েছে ১৯৮৩। এই সালের সঙ্গে মিলিয়ে কোনো সনদ জমা দেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সনদ অনুযায়ী, বেনজীর ১৯৮৪ সালে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ২২৯ পেয়ে (প্রায় ৪৬ শতাংশ) দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে স্নাতকোত্তরে উত্তীর্ণ হন। অর্থাৎ তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। ভর্তির আবেদনে তিনি স্নাতকোত্তরে মোট নম্বর দেখিয়েছেন ৫০০-এর পরিবর্তে ৪০০। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এ বিষয়ে বলেন, ডক্টরেট প্রোগ্রামে ন্যূনতম নম্বর এবং স্নাতক ডিগ্রি থাকার বাধ্যবাধকতাসহ কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে, যেগুলো শিথিলযোগ্য নয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ভাষ্য, বেনজীরের নম্বর কম থাকার বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে গেছে। কাউন্সিলে তাঁকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।

জালিয়াতির ডলার শিবলীর অ্যাকাউন্টে

মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থ পেয়েছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থ লেনদেনের সঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দুই দশকের পুরনো বন্ধু জাভেদ মতিনের নাম উঠে এসেছে যার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে।

যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত জাভেদ মতিন ২০২০ সালের বড় একটি সময়জুড়ে প্রতারণা করে হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন সোর্সিং কোম্পানি মিং গ্লোবাল লিমিটেড থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিনিয়োগের ছদ্মবেশে এই অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংস আইএনসি নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানির দুইটি ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ লাখ ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে এবং আরেকটি অংশ একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়, যেই কোম্পানির পেছনেও তিনিই আছেন বলে মনে করা হয়।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন