বিমাশিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: বাংলাদেশ কত দূর?

অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের বিমাশিল্পও সফ্টওয়্যার গ্রহণের মাধ্যমে আধুনিক রূপ পেয়েছে।
তুলনামূলক বিচারে বাজার ছোট হলেও দেশে এখন ৩১টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। সবগুলোই তাদের কার্যক্রমে সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় এই সফটওয়্যারের কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
উন্নত দেশের বিমা কোম্পানিগুলি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এবং নেটওয়ার্ক প্রসারিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, যেখানে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কম বেতনের এজেন্টদের উপর নির্ভরশীল।
পুরনো এই পদ্ধতির উপর নির্ভরতা থেকে বোঝা যায় কেন বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। দেশে জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম বিমায় আগ্রহ দেখিয়েছে।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) এই খাতের প্রচার-প্রসার, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াতে পারে। আরও পরিষ্কার করে বললে, ‘ইন্টেলিজেন্ট ইনসুরেন্স সফটওয়্যার’ দেশের বিমাশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে।
ইন্টেলিজেন্ট সফ্টওয়্যার
বিমা খাতের জন্য বুদ্ধিমান সফ্টওয়্যার বিকাশে কাজ করছেন সফ্টওয়্যার প্রকৌশলী হাসিব মুয়াম্মার। তিনি বিমা সফ্টওয়্যার কী করতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকার উপর জোর দেন। হাসিব বাংলা আউটলুকে বলেন, ‘অবশ্যই প্রথমে আমাদের অ্যাকচুয়ারিয়াল টেবিল বুঝতে হবে।’ অ্যাকচুয়ারিয়াল টেবিল হল বিমার ভিত্তি এবং এটি মেশিন লার্নিংয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শাখাবিশেষ) একটি মৌলিক রূপ।
হাসিব বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, মর্টালিটি সারণির (mortality tables) কথা ধরুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী লোকেরা কিভাবে বেঁচে থাকবে তার অত্যন্ত নির্দিষ্ট এবং চমকপ্রদ সঠিক অনুমান তৈরি করে এই সারণি।’ হাসিব বলেন, ‘অনুমানগুলি বাতাস থেকে ভেসে আসে না। এগুলি লক্ষ লক্ষ তথ্য ও বাস্তব জীবনের উদাহরণ থেকে সংগৃহী হয়। পরিমার্জিত হয়। তারপর আসে চূড়ান্ত ফল।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ধরুন, বাংলাদেশে ৬৫ বছর বয়সে এক হাজার মানুষ মারা গেল। বাংলাদেশে একজন মানুষের গড় আয়ু স্থির করতে এসব তথ্য সফ্টওয়্যারে ইনপুট দেওয়া হয়।’ অর্থাৎ তথ্য ব্যবহার করা হয়।
ভাবুন, একটি জীবনবিমা কোম্পানি নির্দিষ্ট বিমার জন্য কিভাবে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করবে? ইন্টেলিজেন্ট বিমা সফ্টওয়্যার সেটা সূক্ষ্মভাবে তৈরি করতে পারে, যদি সেখানে সব তথ্য ইনপুট দেওয়া হয়।
হাসিব বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বিমা সফ্টওয়্যারগুলির বেশির ভাগই মূলত লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এগুলো শুধু তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে পারে। তথ্য ইনপুট দেওয়া ও প্রক্রিয়া করার পর সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার না করেই একটি ফল তৈরি করে। এখানে প্রচুর তথ্য অব্যবহৃত থেকে যায়।
হাসিব বলেন, সৌভাগ্যবশত, বাংলাদেশি সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা বুদ্ধিমান সফ্টওয়্যার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই সফ্টওয়্যার নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে ফল তৈর করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ঢাকার ধানমন্ডির বিমাবিহীন গাড়িগুলোর বা গাড়ির মালিকদের তালিকা চান, এই সফ্টওয়্যারটি উপযুক্ত তথ্য ইনপুট দেওয়া হলে তা তৈরি করতে পারে।
হাসিব বলেন, সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশে গোপনীয়তার নীতি কঠোর না হওয়ায় সহজেই প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়।
মেশিন লার্নিং খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত না হওয়ায় বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলি এখনও দ্বিধাবোধ করছে। তবে কিছু কোম্পানি সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপ গ্রহণ করতে শুরু করেছে।
সন্ধ্যানি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আইটিপ্রধান এমএ হালিম সরকার জানিয়েছেন, তারা বুদ্ধিমান সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে কোম্পানির কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে অফিসের কোনো কাজে কাগজ-কলমের আর দরকার হবে না। কাগুজে রসিদের জায়গায় ডিজিটাল রসিদ সন্ধানীর অগ্রগতি ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করছে।
হালিম সরকার বলেন, ‘আমাদের আরেকটি ডিজিটাইজড পরিবর্তন দেখুন বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রে যা আগে ম্যানুয়ালি করা হত। এখন এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। আমাদের কম্পিউটারগুলো সব হিসাব-নিকাশ করছে এবং কোনো ভুল-ত্রুটি ছাড়াই বিল তৈরি করছে।’ এটি একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সন্দেহ নেই।
তিনি আরও বলেন, ইন্টেলিজেন্ট সফটওয়্যার ইনস্টল করলে বাংলাদেশের বিমাশিল্পের পুরো কার্যক্রম বদলে যাবে। আমাদের বিমা কোম্পানিগুলি প্রচুর কাঁচা তথ্য রাখে। অনেক কোম্পানির তথ্য ক্রমবর্ধমান হারে জমা হয়ে যাচ্ছে। বুদ্ধিমান সফ্টওয়্যার এখানে গতি আনবে।