পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর সফরে ১৯৭১ সালের বিষয় তুলবে ঢাকা: তৌহিদ হোসেন

ইউএনবি
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম
বাংলাদেশে আগামী ২৩ আগস্ট সফর করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী। তাকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তত এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে ঢাকা তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সোমবার (৪ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
পাকিস্তানের কাছ থেকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো বাংলাদেশ উত্থাপন করবে কিনা—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়ই আলোচনার টেবিলে থাকবে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বাস্তবসম্মত উপায়ে’ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চলতি মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের নির্ধারিত সফরের সময় সবকিছু আলোচনায় থাকবে।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে নৃশংসতা চালিয়েছে—তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া এবং পাকিস্তানের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি আদায়ের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করতে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা প্রয়োজন, বলেছেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত কীভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে—তা বাংলাদেশ নির্ধারণ করে না এবং একইভাবে ভারতও কীভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে—তা নির্ধারণ করে না।
হোসেন বলেন, তারা সম্পর্কের একটি দিক অন্য দিকে আটকে যেতে দেখতে চায় না। ১৫ বছর পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোতে জড়িত থাকার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ২৩ আগস্ট ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
অন্যান্য ব্যস্ততার পাশাপাশি তিনি ২৪ আগস্ট পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এর আগে গত এপ্রিলের তার পূর্ব নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এক প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার কারণে সফরটি স্থগিত করা হয়েছিল।
সে সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ‘অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২৫ সালের ২৭-২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করতে পারছেন না।’ পরবর্তীতে, উভয় পক্ষ পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে নতুন তারিখ চূড়ান্ত করে।
গত সপ্তাহে জুলাই মাসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং ফিলিস্তিনে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি নিজেদের অটল সংহতি পুনর্ব্যক্ত করে।
জাতিসংঘে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে ইসহাক দার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই বার্তাটি জানানো হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর এটি ছিল তাদের চতুর্থ বৈঠক।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করে এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। পাশাপাশি সংযোগ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির উপায় অনুসন্ধান করে। উভয় পক্ষ অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ পর্যায়ের সফর করতে সম্মত হয়েছে।