রাষ্ট্রদূত পিটার হাস
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা ছাড়ছেন। আর ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেরত গিয়ে তিনি অবসরে যাবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি সূত্র বিষয়টি বাংলা আউটলুককে নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি কেন অবসরে যাচ্ছেন সে বিষয়টি পরিষ্কার করেনি সূত্রটি।
এর আগে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত এক বাংলাদেশিকে বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটনে নতুন চাকরি খুঁজবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত মে মাসে হোয়াইট হাউস এ তথ্য জানায়। আর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গুরুত্বপূর্ণ পদে ইতোমধ্যে পরিবর্তন এসেছে।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের আগে রাষ্ট্রদূত হাস যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও ব্যবসা বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশে নিযুক্তি ও গণতন্ত্র-মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা
২০২২ সালের ১৫ মার্চ পিটার হাস বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন। ঢাকায় নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ শুরু করেন। ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের সঙ্গে বৈঠক করতে তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগে বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে যান তিনি।
ওই বাড়িতে রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে মায়ের কান্না নামের আরেকটি সংগঠনের কর্মীরা। তখন তড়িঘড়ি করে পিটার হাস গাড়িতে করে সেখান থেকে চলে আসেন। এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জানা যায়, 'ঢাকায় রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা ১৪ ডিসেম্বর একটি বৈঠক দ্রুত শেষ করেছেন নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে। আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছি।'
পেয়েছেন হুমকি!
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন মার্কিন এ কূটনীতিক।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বিরুদ্ধে।
কঠিন সময় কাজ করেছেন পিটার!
পিটার হাসকে বেশ জটিল সময়ে বাংলাদেশে কাজ করতে হয়েছে। একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের রীতিমতো ঠান্ডা যুদ্ধ চলছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে র্যাবের সাবেক ও তৎকালীন সাতজন কর্মকর্তার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আসলে আওয়ামী লীগ সরকার বেশ বেকায়দায় পড়ে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে যায় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে না যাওয়ার ইঙ্গিত দেন।।
মূল্যায়ন!
পিটার হাসের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের এক সাবেক কূটনীতিক বলেন, পিটার হাসের সঙ্গে তার সদরদপ্তর 'বেইমানি' করেছে। তাকেসহ তিনজন কূটনীতিককে অপদস্থ করা হয়েছে কেবলমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলপত্রের কথা মাথায় রেখে।
পিটার হাসের কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন জানতে চাইলে, সাবেক এ কূটনীতিক বলেন 'আর্চার ব্লাড' অনেক পরে এসে তার মূল্যায়ন পেয়েছেন। আমি জানি না পিটের হাস কি পাবেন।'
(আর্চার কেন্ট ব্লাড (১৯২৩-২০০৪), বাংলাদেশে নিযুক্ত একজন আমেরিকান কূটনীতিক। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তৎকালীন চলমান নৃশংসতা বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় কঠোর ভাষায় একটি টেলিগ্রাম বার্তা পাঠানোর জন্য বিখ্যাত। তার সেই বিখ্যাত টেলিগ্রাম বার্তা ব্লাড টেলিগ্রাম নামে পরিচিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আর্চার ব্লাড তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে লেখা দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ – মেমোয়ারস অব অ্যান অ্যামেরিকান ডিপ্লোম্যাট বইয়ের সূচনায় বলেন, ‘একাত্তর নিয়ে লিখতে বসে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। কারণ আমার বহু বন্ধুর মুখ ভেসে উঠছে, যারা শহীদ হয়েছে।’)