Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুমিল্লা সিটির দুই কোটি টাকার ক্যামেরা অচল হয়ে ঝুলছে নগরজুড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

কুমিল্লা সিটির দুই কোটি টাকার ক্যামেরা অচল হয়ে ঝুলছে নগরজুড়ে

নগরবাসীর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে স্থাপন করে ৯০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রায় দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বসানো এসব ক্যামেরায় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, গাড়ির নম্বর স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ, মুখ চিনতে পারার ক্ষমতা, রাতেও পরিষ্কার দেখা যাওয়ার নাইট ভিশন সুবিধা এবং ৩৬০ ডিগ্রি ঘূর্ণনক্ষমতা।

তৎকালীন নগর কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল, এসব প্রযুক্তি অপরাধ দমন, যানজট নিরসন ও জরুরি সময়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে আশার সঞ্চার হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এক বছরের মধ্যেই অধিকাংশ ক্যামেরা নষ্ট হয়ে পড়ে। কোনো ক্যামেরার লেন্স ধুলাবালিতে ঢাকা, কোথাও তার ছিঁড়ে গেছে, আবার অনেক ক্যামেরার দিক ঘুরে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নজরদারি বন্ধ হয়ে গেছে।

ফৌজদারি মোড়, চকবাজার, ঈদগাহ, ইপিজেড গেট, টমছম ব্রিজ, নবাববাড়ি চৌমুহনী, কান্দিরপাড়সহ অন্তত ৯০টি এলাকায় এসব ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। তবে এখন সেগুলোর অধিকাংশই কার্যকারিতা হারিয়েছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ‘নাইস পাওয়ার আইটি সলিউশন লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি তৎকালীন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ক্রয়নীতি না মেনে কোটেশনের মাধ্যমে কাজ পায় এবং ২০১৮ সালে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে, যা শেষ হয় ২০২০ সালে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক্যামেরাগুলো বসানো হলেও সেগুলো চালু নেই, দেখাশোনার কোনো ব্যবস্থাও নেই। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিল তুলে নিয়েছে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের কোনো কাজ হয়নি। এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনের ক্যামেরাটিও এখন অচল।

কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামূল হক ফারুক বলেন, শহরে চুরি ও ছিনতাই বেড়েছে। অপরাধী শনাক্তের একমাত্র উপায় সিসিটিভি। কিন্তু সিটির ৯০টি ক্যামেরা এখন নিষ্ক্রিয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা তানভীর আলম অভি বলেন, ইভ টিজিং ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়েছে। কার্যকর ক্যামেরা থাকলে অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করা যেত।

সিটি করপোরেশনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ খায়রুল বাশার জানান, নতুন করে টেন্ডার দিয়ে ক্যামেরা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি ক্যামেরা সচল করা হয়েছে, বাকিগুলোর কাজ চলছে। ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নতুন ঠিকাদারই পালন করবে।

তিনি আরও বলেন, ক্যামেরাগুলোতে স্বয়ংক্রিয় নম্বর শনাক্তকরণ, নাইট ভিশন, ১০০ মিটার দূরত্বের ফুটেজ ধারণ, ১০ দিনের ভিডিও সংরক্ষণ এবং ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরার ক্ষমতা রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন বলেন, পুরনো ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে নতুনদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ধাপে ধাপে নষ্ট ক্যামেরাগুলো সচল করা হবে।

তবে এসব আশ্বাসে পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না নগরবাসী। তারা বলছেন, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও জনবহুল এলাকায় কার্যকর নজরদারির জন্য ক্যামেরাগুলোর চালু থাকা অত্যন্ত জরুরি।

তারা মনে করেন, কেবল প্রযুক্তি স্থাপন করলেই হবে না—সঠিক তদারকি, রক্ষণাবেক্ষণ ও সময়মতো সমস্যার সমাধান ছাড়া শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করা যাবে না। সেইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন