খাগড়াছড়িতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত: পুলিশ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত নাড়াইছড়ি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় দুই রাজনৈতিক সংগঠন—ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, নাড়াইছড়ির জোড়া সিন্ধু কারবারিপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফের একদল সশস্ত্র সদস্য, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন বিপ্লব চাকমা, সেখানে উপস্থিত হয়। অপরদিকে, জয়দেব চাকমার নেতৃত্বে জেএসএসের সশস্ত্র একটি দলও সেখানে ছিল। উভয় পক্ষের সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় চল্লিশজন করে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই মুখোমুখি অবস্থান থেকে শুরু হয় গুলি বিনিময়, যা বেশ কিছু সময় ধরে চলে। এতে ইউপিডিএফের চারজন নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। যদিও তাঁদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
ওসি আরও জানান, বর্তমানে ওই এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে।
তবে এই ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফ। সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতা অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে বলেন, “এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।”
তিনি বলেন, ইউপিডিএফ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং তাদের কোনো সশস্ত্র শাখা নেই। 'গণমুক্তি ফৌজ' বা 'পিপলস লিবারেশন আর্মি' নামে তাদের কোনো সামরিক গোষ্ঠী নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
অংগ্য মারমার অভিযোগ, খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় এক ত্রিপুরা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চলমান গণআন্দোলনের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ‘ভুয়া’ খবর ছড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর জেএসএস থেকে ভিন্নমত পোষণ করে ইউপিডিএফ গঠিত হয়। চুক্তির বিরোধিতায় গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির সঙ্গে জেএসএসের দ্বন্দ্ব একসময় সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়।
২০১৬ সাল পর্যন্ত দুই পক্ষের সংঘাতে প্রায় এক হাজার জন নিহত হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি। পরে উভয় সংগঠনের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক এক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সংঘর্ষের মাত্রা কিছুটা কমে আসে।
তবে এরপর সংগঠনভিত্তিক ভাঙনের ফলে জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন গোষ্ঠী তৈরি হয়, যা পার্বত্য রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করে।