মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান অভিযুক্তসহ গ্রেপ্তার ৫, রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক

ছবি: ফজর আলী
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রবিবার (২৯ জুন) ভোর ৫টার দিকে তাকে রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে, ঘটনা সংক্রান্ত একটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ঘটনার পর ফেসবুকে কেউ কেউ তাকে বিএনপি নেতা দাবি করে প্রচার করেন। কেউ আবার তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন বলে দাবি করেন। এই নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক এবং স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, ফজর আলী বহুদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। আর উপজেলা বিএনপি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ফজর আলীকে বিএনপি নেতা উল্লেখ করে প্রচারণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মামলা ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফজর আলী ঘটনার রাতে ভুক্তভোগীর ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণ করেন। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (ধারা ৯(১)) মামলা রুজু হয়। ঘটনার পর এলাকাবাসীর হাতে পিটুনির শিকার হয়ে আহত অবস্থায় পালিয়ে যান তিনি। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মামলার তদন্ত দ্রুতগতিতে চলছে এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু ব্যক্তি ধর্ষণের পরবর্তী দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন এবং তা সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ওই চারজনকে চিহ্নিতের পর আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
বিএনপি স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, ঘটনার পর ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম 'মুরাদনগর লাইভ টিভি' ফজর আলীকে বিএনপি নেতা বলে প্রচার করে। এতে বিভ্রান্তি ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন, ফজর আলী বহুদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং আওয়ামীপন্থি স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতারা এক বিবৃতিতে এই প্রচারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মিডিয়া উইং বিএনপিকে সামাজিকভাবে হেয় করতে নিয়মিত মিথ্যা প্রচার চালায়।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব বরদাশত করা হবে না বলে তিনি জানান।
ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন স্থানীয় প্রতিনিধি দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, অপরাধীর পরিচয় রাজনৈতিক হোক বা ব্যক্তিগত, ন্যায়বিচারই প্রধান বিষয়।