অপকর্ম ঢাকতে সবাইকে 'ম্যানেজ' করছেন তালার সেই ইউএনও শেখ রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম

নিজের অপকর্ম ঢাকতে লাখ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সেই ইউএনও শেখ রাসেল। বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর শুরু হয় তার গাত্রদাহ। সাংবাদিকদের তথ্যবহুল খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের প্রতিবাদে প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় তড়িঘড়ি করে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টায় তালা ডাক বাংলোর সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ইউএনওর বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগ ও বদলি ঠেকাতে একদল ঠিকাদার ও রাজনৈতিক কর্মী তার পক্ষে ছাপাই গাওয়াতে এই মানববন্ধন করা হয়। এছাড়া তাদের মানববন্ধন সফল করতে ইউএনও ৫ লাখ টাকা দলীয় কিছু নেতা-কর্মীকে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
মানববন্ধনে তালা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মৃণাল কান্তি রায়ের সভাপতিত্বে ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন তালা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু, অধ্যাপক গোলাম ফারুক, জাহাঙ্গীর হোসেন, কলেজ শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোশারাফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষক নেতা জগদিশ হালদার, আদর্শ শিক্ষক পরিষদ নেতা অধ্যাপক আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় ডেএসডি নেতা মীর জিল্লুর রহমান, তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হাকিম, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, ইমাম পরিষদ নেতা মাও. তাওহিদুর রহমান প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল তালাতে যোগদানের পর থেকে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। এই উপজেলাকে সুন্দরভাবে গড়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তার নামে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল দুপুরে তালা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের ৯ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপু। এসময় তালা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এমএম মামুন আলম তথ্য দিতে অস্বীকার করায় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাংবাদিককে তথ্য জানার কে এমন প্রশ্ন করলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষ তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেলকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিকসহ স্থানীয়দের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিক টিপুকে ১৭৬ ধারায় ১০ দিনের সাজা দেন এবং ২০০ টাকা জরিমানা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফুঁসে উঠে তালাসহ সারা বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ। দেশের প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক ও আঞ্চলিক পত্রিকায় নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে একই সময় তালা উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের সামনে শেখ মো. রাসেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে মাবনবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা প্রকৌশলী রথিন্দ্র নাথ হালদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, একাডেমিক সুপারভাইজার প্রভাষ কুমার দাশ প্রমুখ।
এঘটনায় তালা উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, অফিসের কাজ বাদ দিয়ে একজন আমলার পক্ষে সরকারি কর্মকর্তারা এভাবে রাস্তায় দাঁড়ানো দুঃখজনক। বিভিন্ন ভূমি অফিসের নায়েবরা এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করায় জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।