Logo
Logo
×

সারাদেশ

অনন্ত অপেক্ষার ১১ বছর, আজও নির্বাক পথচেয়ে

Icon

মনির আহমেদ

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ এএম

অনন্ত অপেক্ষার ১১ বছর, আজও নির্বাক পথচেয়ে

দক্ষিণ কুমিল্লা তথা বৃহত্তর লাকসামের দুই সিংহপুরুষ হিসাবে খ্যাত লাকসাম উপজেলা বিএনপি ও লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারের বণিক সমিতির দীর্ঘ সময়ের সভাপতি, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু এবং লাকসাম পৌরসভা বিএনপির সভাপতি লাকসাম বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির পারভেজ গুম হওয়ার ১১ বছর পূর্ণ হল আজ। তারা ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর বিতর্কিত র‌্যাব কর্তৃক গুম হন।

হিরু-হুমায়ুন ওই দিন লাকসাম পৌরসভা বিএনপির তৎকালীন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনকে সাথে নিয়ে এম্বুলেন্স যোগে লাকসাম পৌর এলাকাধীন থেকে জেলা সদর কুমিল্লার একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। ওই দিন সারাদেশে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জোটের হরতাল কর্মসূচি থাকায় হিরু-হুমায়ুন কুমিল্লা যাওয়ার জন্য বাহন হিসাবে এম্বুলেন্স ব্যবহার করেন। তারা লাকসাম থেকে বের হওয়ার পরপরই তাদেরকে বহনকারী এম্বুলেন্সের পিছু নেয় র‌্যাব। 

এম্বুলেন্সটি লাকসামের কিছুটা উত্তরে আলীশ্বর বাজারে পৌঁছালে এম্বুলেন্সের গতিরোধ করে র‌্যাব। তারা  ড্রাইভারকে বেধড়ক মারধর করে হিরু-হুমায়ুন এবং জসিমকে র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেয়। তারা কুমিল্লার দিকে চলে যায়। কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় গিয়ে অন্য একটি কালো গ্লাসবেষ্টিত মাইক্রোবাসে শুধু হিরু-হুমায়ুনকে তুলে দেয়! ওই গাড়িটি তখন হিরু-হুমায়ুনকে নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক হয়ে ঢাকার দিকে চলে যায়। জসিমকে র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদের গাড়িতেই রাখা হয়।

জসিমকে র‌্যাব হেফাজতে রেখে একই দিন রাত ৮টার পর র‌্যাব পুনরায় লাকসাম এসে সাইফুল ইসলাম হিরুর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার মিলে হানা দেয়। ওই সময় মিলে হিরু সাহেবের সাথে সাক্ষাত করতে আসা কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। এটা অবশ্য ওই সময়ে ওখানকার প্রতিদিনেরই নিয়ম ছিল। ব্যবসায়ী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিদিন সন্ধার পর নিজ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন সদালাপী এবং সর্বদা হাসোজ্জল হিরু সাহেব। 

আড্ডা দিতে আসা দলীয় নেতাকর্মী এবং ব্যাবসায়ীসহ ব্যাংক কর্মকর্তারা হিরু সাহেবের কুমিল্লা থেকে ফেরার অপেক্ষার পাশাপাশি নিজেরা বসে গল্প করছিলেন। ঠিক ওই সময় তারেক সাঈদের নেতৃত্বে র‌্যাব বাহিনী অনেকটা হিংস্র ডাকাত দলের মত মিলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেই প্রতিষ্ঠানটির অফিস কক্ষে নির্মম, বীভৎস এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় নারকীয় তান্ডব শুরু করে। মিল কর্মচারীদের প্রচন্ড মারধর করে মিলের ক্যাশে থাকা প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায় খুনী হাসিনার কিলার বাহিনীর অন্যতম এই জল্লাদ তারেক সাইদের নেতৃত্বাধীন র‌্যাব বাহিনী! 

একপর্যায়ে মিলের হিসাবরক্ষণ কর্মচারী বুদ্ধদেবসহ হিরু সাহেবের সাথে সাক্ষাত করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সকলকে মারধর করে র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেন তারেক সাইদ! তারেক সাইদের এমন ভয়াল অপারেশনের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা লাকসাম শহরে! বিভীষিকাময় এই অপারেশনের পর ওই রাতের শেষাংশে জসিমসহ হিরু সাহেবের ফ্লাওয়ার মিল থেকে আটককৃত সকলকে লাকসাম থানায় সোপর্দ করলেও হিরু আর হুমায়ুনের সন্ধান মেলেনি গত ১১ বছর। 

সেদিন থেকে গত ১১ বছর যাবত হিরু-হুমায়ুন নিখোঁজ, নিরুদ্দেশ! তারা কি জীবিত আছেন নাকি মেরে ফেলা হয়েছে তাও জানে না কেউই! 

ওই দিন মাগরিবের নামাজের আগেই অজ্ঞাত কারণে লাকসাম বাজারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ব্লাক আউট করা হয় গোটা লাকসাম শহরকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক মারমুখী তৎপরতায় দোকানপাট বন্ধ করে লাকসাম বাজারের ব্যাবসায়ীরা এবং বাজারে আগত সকল মানুষজন সন্ধ্যার আগেই বাড়িঘরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়! সেই সাথে লাকসামে শহরে বসবাসরত বিএনপিসহ ভিন্নমতাবলম্বী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও লাকসাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়! 

এ অবস্থায় জনমানবহীন অন্ধকারাচ্ছন এক ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয় আলোর শহর লাকসাম!

হিরু-হুমায়ুন এভাবে গুম হওয়ার পর তাদের সন্ধান ও মুক্তির দাবিতে বিএনপি সহ লাকসামের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে আন্দোলন করেছে দীর্ঘদিন। পরিবারের সদস্যরা র‌্যাবসহ দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এমনকি তৎকালীন অনির্বাচিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পর্যন্ত ধরণা দিয়েও হিরু-হুমায়ুনকে ফিরে পায়নি।

বৃহত্তর লাকসামের সর্বত্র গুঞ্জন রয়েছে, হিরু-হুমায়ুনকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত থাকলেও গুম কিংবা গুপ্তহত্যার সিদ্ধান্ত ছিল না। তবে তারা গ্রেফতার হওয়ার পর অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল লাকসামের তৎকালীন এমপি তাজুল ইসলামের মধ্যস্থতায় তারেক সাঈদের সাথে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে হিরু-হুমায়ুনকে ওই রাতেই তারেক সাঈদকে দিয়ে  গুপ্তহত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে।

হিরু-হুমায়ুন এর সন্ধান বা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে গুম বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে “মায়ের ডাক” সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আয়োজিত সভা সেমিনারে হিরু-হুমায়ুন এর পরিবারের সদস্যরা নানান বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সর্বদাই উপস্থিতি থাকতো।

পরিবারের শীর্ষ ব্যক্তিদের হারিয়ে আতঙ্ক আর উৎকন্ঠার মধ্যে থাকলেও হিরু-হুমায়ুনের গোটা পরিবার অদম্য সাহসিকতা নিয়ে গত ১১ বছর  যাবত লাকসাম বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অবিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে। লাকসামের বিএনপিতে তাদের নেতৃত্বও অনেক শক্তিশালী। কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীসহ এখানকার সকল শ্রেণি-পেশার জণগণ সাইফুল ইসলাম হিরুর একমাত্র পুত্র রাফসানুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির পারভেজের একমাত্র পুত্র শাহরিয়ার কবির রাতুল ও ছোট ভাই গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এক কথায় বললে, হিরু-হুমায়ুনের পরিবার মানেই বৃহত্তর লাকসামের বিএনপি। 

বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপিসহ আমজনতার কাছে এখানকার শতবর্ষের রাজনীতির ইতিহাসে আকাশচুম্বী জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল আজিমও এই দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে সর্বদাই রাজনৈতিক মাঠে সরব রয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে হিরু-হুমায়ুন দুজনই অনেকসস্বচ্ছল এবং সজ্জন সামাজিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দুজনের পরিবারই লাকসামের আদি পরিবার। হিরু-হুমায়ুন রাজনীতি থেকে সামাজিকতাকে খুব বেশি প্রাধান্য দিতেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা তাদের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব দিয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে লাকসামকে শান্তিময় রেখেছিলেন। ওই সময় লাকসামে উল্লেখ করার মতো কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেনি। 

হিরু সাহেবের পিতা মরহুম চান মিয়া সাহেব লাকসামের সর্বজনীন একজন সামাজিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৮৪ সালে লাকসাম পৌরসভা গঠিত হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত চান মিয়া সাহেব তৎকালীন লাকসাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। 

২০১৫ সালে লাকসাম পৌরসভার নির্বাচনে লাকসাম পৌরবাসীর বিশেষ অনুরোধে হুমায়ুনপত্নী শাহনাজ আক্তার রানু মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যপক সাড়া পান। দলমতনির্বিশেষে লাকসাম পৌরবাসী সকলেই শাহনাজকে লাকসাম পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বাচনে শাহনাজের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন ও ভোটারদের মুভমেন্ট বুঝতে পেরে ঈর্ষান্বিত হয়ে লাকসামের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন হেলমেট পরে অত্যাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে শাহনাজের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে হামলা করে। ওই হামলায় শাহনাজের ব্যাবহৃত গাড়ি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে আসা আনোয়ার উল আজিমের গাড়িসহ ১৫-২০টি মাইক্রোবাস, কার এবং দুই শতাধিক মোটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

একইদিন মাফিয়া শাসকগোষ্ঠীর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা লাকসাম পৌর এলাকায় শাহনাজ সমর্থিত কর্মী-সমর্থকদের প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযাগ করে!

ওই হামলায় গুরুতর আহত হয় বিএনপি নেতাকর্মীসহ শাহনাজ সমর্থিত পাঁচ শতাধিক দলনিরপেক্ষ পৌরবাসী! তাদের এমন পৈশাচিক আচরণে আতঙ্কিত হয়ে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে শাহনাজ সমর্থকরা আত্মগোপনে চলে যায়। ভোট গ্রহণের দিন তারা নিজেরাই নিজেদের ভোট দিয়ে ছিনিয়ে নেয় লাকসাম পৌরসভার তৎকালীন নির্বাচনে মেয়র পদে নিশ্চিত বিজয়ী হুমায়ুনপত্নী শাহনাজের বিজয়! এরপর থেকে লাকসাম-মনোহরগঞ্জে আর কোনো ইলেকশন হয়নি। মাফিয়া এমপি তাজুল আর তার শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা আমিরের সিলেকশনেই লাকসাম-মনোহরগঞ্জের সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি নির্ধারিত হতো।

এত কিছুর পরও মাফিয়া শাসকগোষ্ঠী ক্ষান্ত হয়নি। তাদের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী হিরু সাহেবের মালিকানাধীন লাকসামের বিলাসবহুল সর্ববৃহৎ শপিংমল চান মিয়া টাওয়ারের দোকানপাট একাধিকবার ভাংচুর করেছে। কথিত উন্নয়নের নামে হিরু-হুমায়ুনের মালিকানাধীন অনেক ভূমি দখল করে নিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে গুম, গুপ্তহত্যা বিষয়ক সভা, সমাবেশ ও সেমিনারের দিন হিরু-হুমায়ুনের ঢাকার বাসভবনের আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, আওয়ামী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে প্রকাশ্যেই অবস্থান নিয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর হিরু-হুমায়ুন গুম হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের দুজনের নেতৃত্বে লাকসামের বিএনপি ছিল অনেক শক্তিশালী। সাইফুল ইসলাম হিরুর নেতৃত্বে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম ৩০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।

লাকসামের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আমজনতার ধারণা, ব্যাপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপিতে হিরু-হুমায়ুনের শক্তিশালী নেতৃত্বে ইর্ষান্বিত হয়েই একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অর্থায়নে তৎকালীন স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি তাজুল ইসলামের যোগসাজশে হিরু-হুমায়ুনকে র‌্যাব দিয়ে গুম এবং পরবর্তীতে গুপ্তহত্যা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে ৭ খুন মামলার আসামি হয়ে খুনি তারেক সাইদ এখন জেলে থাকলেও হিরু-হুমায়ুন গুমের বিষয়ে তার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওদের গুমের বিষয়ে তার কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো তথ্য জানতে চেয়েছে কিনা তাও জানে না তাদের পরিবার বা দলের কেউ। অনেকের মতে, বর্তমানে তারেক সাঈদ, তাজুল ইসলাম ও তার শ্যালক মহব্বতকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হিরু-হুমায়ুন গুমের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে। 

হিরু-হুমায়ুনের দুই পরিবারে কোনো আনন্দই নেই গত ১১ বছর। উৎসবমুখর দিবসগুলো বিশেষ করে ঈদ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে তারা চাইলেও আনন্দ করতে পারেন না। আনন্দ উৎসবের সময় স্বজন হারানোর কষ্টে মনের অজান্তেই তাদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। লাকসাম পৌর শহরের পাশাপাশি দুই গ্রাম গাজীমুড়া ও ফতেহপুরে হিরু-হুমায়ুনের রাজপ্রাসাদের মত দুটি বাড়ি প্রতিমুহূর্তে যেন ডুকরে ডুকরে কাঁদছে তাদের মনিবের প্রতিক্ষায়।

বাংলাদেশের সকলেই অবগত ২০০৮-পরবর্তী সময় থেকে বিচারবহির্ভূত বা গুপ্তহত্যা সবই হয়েছে খুনি হাসিনার নিয়ন্ত্রণাধীন আয়নাঘর নামক গোপন বন্দিশালা বা টর্সারসেলে।

আয়নাঘর থেকে কিছু বন্দি উদ্ধার বা সেখানে পৈশাচিক নির্যাতনের মধ্যে বন্দি অবস্থায় মৃত মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেলেও লাকসাম বিএনপির জনপ্রিয় দুই শীর্ষ নেতা হিরু-হুমায়ুন সম্পর্কে অদ্যাবধি কিছু জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে হিরু-হুমায়ুন পরিবার, বিএনপি নেতাকর্মীসহ বৃহত্তর লাকসামের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

অনেকে বলছেন, বিতর্কিত র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদ কাউকে গুম করার পর তাদের হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে বালুভর্তি বস্তা চাপা দিয়ে ফেলে দিতেন। নারায়নগঞ্জে একসাথে প্রথমে গুম এবং পরবর্তীতে খুন হওয়া ৭ জনের মত হিরু-হুমায়ুনের ভাগ্যেও কি এমন কিছু ঘটেছে?

দীর্ঘ ১১ বছর হিরু-হুমায়ুন নিখোঁজ থাকলেও হাল ছাড়তে রাজি না তাদের পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, হিরু-হুমায়ুন আয়নাঘরে জীবিত অবস্থায় আছেন এবং ফিরে আসবেন যেকোনো সময়। হিরু-হুমায়ুনকে ফিরে পাওয়ার  বুকভরা এমন আশা নিয়ে প্রতিটি ক্ষণে কেউ তাদের বাবার প্রতীক্ষায়, কেউ তাদের সন্তানের প্রতীক্ষায়, কেউ তাদের স্বামীর প্রতীক্ষায়, কেউ তাদের ভাইয়ের প্রতীক্ষায়, কেউ কেউ তাদের প্রিয় নেতাদের প্রতীক্ষায় আজও নির্বাক পথ চেয়ে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন