মুনিয়া হত্যা
আবারও বিচার চাইলেন বোন তানিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৪৪ পিএম
মুনিয়া হত্যাকাণ্ডে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের আবারও বিচারের দাবি করেছেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। তিনি মনে করেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে তিনি সঠিক বিচার পাবেন। কারণ হাসিনা সরকার স্বৈরাচার ছিলেন। তার পুলিশ বাহিনী ও আদালতের ওপর আস্থা না থাকায় তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ, গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ চক্রবর্তী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পক্ষপাতিত্ব করার কারণেই জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামসহ আটজনের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
নুসরাত জাহান তানিয়া আরও অভিযোগ করেন, তার বোনের লাশ উদ্ধারের সময় তার যৌনাঙ্গে স্প্যাম ছিল। যা বসুন্ধরার এমডির বলে মনে করেন তিনি ও তার আইনজীবী। কিন্তু তার স্বপক্ষে আইনি কোনো ডকুমেন্টস বা ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট তারা দেখাতে পারেননি।
মুনিয়া আওয়ামী পরিবারের একজন সন্তান। তার প্রয়াত বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং তিনি কুমিল্লাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত ছিলেন জানিয়ে তার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবেও আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আমি আমার বোনের হত্যার বিচার দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায়বিচার পাইনি। আমি জানতে পারি, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বান্ধবী তৌফিকা করিমকে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আনভীরের থেকে ঘুষ নিয়ে মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। আমি এসব ব্যাপারে পতিত স্বৈরাচার, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য, একাধিকবার আবেদন করি, এবং প্রায় ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে, তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে, আনভীররা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস পেতো না। পিবিআইতে যখন আমার মামলাটি গেলো, সেখানেও অর্থ ঢেলে, তৎকালীন পিবিআই প্রধান বনজ কুমারকে ঘুষ দিয়ে, তাদের থেকেও একটি একপেশে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আসে বসুন্ধরা গ্রুপ। ওই রিপোর্টেও আনভীরসহ সকলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমি নারাজি জানানোর পর সেটাও আদালতে খারিজ হয়ে যায়।
এসময় তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তানিয়া। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো মুনিয়া গর্ভবতী ছিল। পিবিআই তাদের তদন্তেও বলেছে সেটা ছিল আনভীরেরই সন্তান। অথচ সেই আনভীরকে তারা উঘঅ স্যাম্পল টেস্ট করতে বললো না। তারা মামলার অন্যান্য আসামি, যেমন সাইফা মিম ও পিয়াসাকে গ্রেপ্তার করলেও আনভীরকে একটিবারের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করেনি। বিচারের নামে কি রকম তামাশা হয়েছে?
বেসরকারি চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোরের কুমিল্লা প্রতিনিধির মাধ্যমে মুনিয়ার বোনকে বিষয়টি সমাধানে আসার জন্য ২০ কোটি টাকার অফার করা হয়েছিল দাবি করে তানিয়া বলেন, এত অন্যায় ও অবিচারের পরেও আমি আনভীরদের হুমকি টাকা ও প্রলোভনের কাছে বিক্রি হয়নি। আমি হালও ছেড়ে দেইনি। আমার মামলা এখনো চলমান আছে। আমি বিশ্বাস করি স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমি ন্যায়বিচার এখন প্রত্যাশা করতেই পারি। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেবেন এবং আমার বোন হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার পেতে সহায়তা করবে।