Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

চীন-ভারতের ঘনিষ্ঠতা: পাকিস্তানের জন্য কী ইঙ্গিত রাখে

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮ এএম

চীন-ভারতের ঘনিষ্ঠতা: পাকিস্তানের জন্য কী ইঙ্গিত রাখে

চীনের তিয়ানজিন শহরে সদ্য অনুষ্ঠিত হলো সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন। নানা দেশের শীর্ষ নেতারা অংশ নিলেও সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে ভারত ও চীনের নেতাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একান্তে সময় কাটান, দেন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

এই সফরে তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, যেখানে তিনি চীন-ভারত সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। শি জিনপিংও নিজের বক্তব্যে জানান, বিশ্ব বদলাচ্ছে, আর এই পরিবর্তনের সময়ে চীন ও ভারত—এই দুই প্রাচীন সভ্যতা—অন্যদের জন্য উদাহরণ হতে পারে।

শি বলেন, “ড্রাগন আর হাতি যদি একসঙ্গে হাঁটে, তবে শুধু নিজেদের নয়, গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে।” তিনি জোর দেন অংশীদারিত্ব এবং পারস্পরিক সাফল্যের দিকটিতে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীও ছিলেন একই সুরে। তিনি বলেন, “ভারত ও চীনের ঘনিষ্ঠতায় ২৮০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ জড়িত। সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতের রপ্তানিপণ্যের ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে, তখন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা মোদী সরকারের কৌশলগত একটি বার্তা হতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতির এই মুহূর্তে চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ক্রমেই শক্তিশালী অর্থনীতিতে রূপ নিচ্ছে, আর চীন রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে। ফলে এ দু’দেশের মৈত্রীকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে নতুন আলোচনার পরিসর।

তবে একপাশে সহযোগিতার বার্তা থাকলেও, অন্যপাশে রয়ে গেছে পুরনো জটিলতা। সীমান্ত বিরোধ, ব্রহ্মপুত্র নদী নিয়ে দ্বন্দ্ব, কিংবা দালাই লামার উপস্থিতি—এসব ইস্যু এখনো ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণ।

এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অবস্থান কেমন হবে—এই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি দৃঢ় কণ্ঠে পুনর্ব্যক্ত করেছেন চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্বের গভীরতা।

তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্ক শুধু কৌশলগত নয়, আবেগ, শ্রদ্ধা ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক ভালোবাসার গল্প।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—পাকিস্তানই প্রথম মুসলিম দেশ, যারা চীনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল।

পাকিস্তানের কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ভারত ও চীনের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা তাদের ওপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বরং পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক অনেক বেশি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

চীনবিষয়ক বিশ্লেষক ড. ফজলুর রহমান বলেন, “চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্ব বাইরের প্রভাবের ঊর্ধ্বে। ভারতের সঙ্গে চীনের সাময়িক ঘনিষ্ঠতা থেকে এ সম্পর্কে ফাটল ধরবে না।”

তবে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন সাবেক কূটনীতিক জোহর সেলিম। তিনি মনে করেন, চীনের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা হয়তো পুরোপুরি বিশ্বাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই, বরং তা অনেকটাই কৌশলগত ও পরিস্থিতিনির্ভর।

তার মতে, ভারত এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে চাইছে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে। চীনকে তাই বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে।

তবে তিনি এটাও বলেন, ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠার, আর সেই পথেই চীনকে অনেক সময় প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে, কৌশলগত বন্ধুত্ব যতই প্রকাশ্যে আসুক, ভেতরে লুকিয়ে থাকে প্রতিযোগিতার ছায়া।

অন্যদিকে পাকিস্তান বরাবরই চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও বিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্কে আগ্রহী। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, এবং অবকাঠামোতে দু’দেশের সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই জটিল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভারত, চীন এবং পাকিস্তানের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখন সময়—সংলাপ, সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের।

এইভাবেই আমরা দেখতে পাই, ভারতের সঙ্গে চীনের সদ্য উষ্ণ হওয়া সম্পর্ক যতটা কৌশলগত, ততটাই প্রতীকীও। আর পাকিস্তানের জন্য এই সম্পর্ক কোনো হুমকি না হয়ে বরং হতে পারে স্থিতিশীলতার আরেকটি সম্ভাব্য জানালা।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন