Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

দ্য গার্ডিয়ান এক্সপ্লেনার

শি, পুতিন ও কিম: সাজানো ছবির আড়ালে বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে নতুন পালাবদলের ইঙ্গিত

Icon

জাস্টিন ম্যাককারি

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ এএম

শি, পুতিন ও কিম: সাজানো ছবির আড়ালে বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে নতুন পালাবদলের ইঙ্গিত

কয়েক বছর আগেও যদি এমন একটি ছবি প্রকাশিত হতো, অনেকেই সেটিকে নিছক ফটোশপের খেলা বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু এখন সেটাই বাস্তব—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। যাঁর পারমাণবিক কর্মসূচিকে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে আগে বিরোধিতা করেছিলেন শি আর পুতিন, সেই কিম আজ তাঁদের সঙ্গেই একই মঞ্চে।

বিশ্ব রাজনীতির পালাবদল এই দৃশ্যকে সম্ভব করেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ আর এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন—এই দুটি ঘটনা যেন নতুন করে আঁকছে বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটা বিশ্ব রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়।

বুধবার সকালে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিশাল “বিজয় দিবস” প্যারেডে শি, পুতিন ও কিম একসঙ্গে এগিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আরও বিশটিরও বেশি দেশের নেতা। ৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানকে স্মরণ করতে এই আয়োজন। কিন্তু উদ্‌যাপন শেষে প্রত্যেকেরই ফিরে যেতে হবে নিজ নিজ দেশের বড় চ্যালেঞ্জে।

চীনের অর্থনীতি ধীর হয়ে আসছে, মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন চাপ, আর রিয়েল এস্টেট খাত প্রায় ভেঙে পড়ার পথে। রাশিয়া টানা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে দুই পক্ষেরই ক্ষতির সীমা নেই। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি কিছুটা বেড়েছে বটে, কিন্তু সেটা এসেছে রাশিয়ার কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করে। কিম এখন দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কথা ভাবছেন, তবে তাঁর দেশের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চিত গতিপথের ওপর।

শি আর পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে “সীমাহীন” অংশীদারিত্ব ঘোষণা করলেও বেইজিং স্পষ্টতই অস্বস্তিতে রাশিয়ার যুদ্ধ আর উত্তর কোরিয়ার সরাসরি সমর্থন নিয়ে। একদিকে এই জোট ধরে রাখার চেষ্টা করছেন শি, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের বাড়তি নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চাইছেন তিনি।

ট্রাম্প যদিও বেইজিংয়ের তালিকায় অতিথি হিসেবে ছিলেন না, তবু তিনি ঘটনাগুলো খেয়াল করছিলেন। নিজের সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ৮০ বছর আগে জাপানকে পরাস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা স্মরণ রাখা উচিত। তিনি আরও যোগ করেছেন, “চীনের জনগণকে আমি শুভেচ্ছা জানাই, তবে শি জিনপিং যেন উষ্ণ অভিনন্দন পৌঁছে দেন পুতিন আর কিম জং উনকেও—যখন তাঁরা একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।”

বেইজিং থেকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো তাই এক প্রতীকের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজকে ছাপিয়ে গেছে শি, পুতিন আর কিমের এই প্রথম যৌথ উপস্থিতি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বহু আলোচিত “অস্থিরতার অক্ষ” এখন বাস্তব রাজনীতির অংশ হয়ে উঠেছে।

তবে এই নাটকীয় ছবি ভবিষ্যতে বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে ওয়াশিংটন, লন্ডন, টোকিও কিংবা সিউলের নেতারা ঘটনাগুলো কৌতূহল আর শঙ্কা মিলিয়ে গভীর দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন, এটুকু নিশ্চিত।

জাস্টিন ম্যাককারি দ্য গার্ডিয়ানের টোকিও সংবাদদাতা।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন