বিবিসির প্রতিবেদন
পতনকে 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে প্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে এগােচ্ছে আওয়ামী লীগ

বিবিসি
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:২৩ এএম

ক্ষমতা হারানোর এক বছর পরও আওয়ামী লীগ তাদের সরকারের পতনের ঘটনাকে 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' হিসেবে প্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে।
দলটির বক্তব্য হচ্ছে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ আরও ভরসা করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার ওপর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সরকারের ব্যর্থতা দলটির রাজনীতিতে ফেরার পথ সহজ করছে বলে এর নেতাদের অনেকে বলছেন।
তবে জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে দমননীতি চালানো ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনুশোচনা প্রকাশের কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই। এ নিয়ে রাজনীতিতে সমালোচনা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাড়ে পনেরো বছরের দীর্ঘ শাসনামলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার অহংকারে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো এবং এমনকি সাধারণ মানুষকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। দলটি একা হয়ে পড়েছিল।
সেই পটভূমিতে পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ যে দলগুলো বর্তমানে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারও আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থানে রয়েছে।
৭৬ বছরের আওয়ামী লীগ এবার সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে বলে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। কারণ দলটির শীর্ষ নেতাসহ নেতৃত্বের বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে আছেন।
দলটির সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ গ্রেফতার হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
দেশের ভেতরে থাকা নেতা-কর্মীরাও এক বছরে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। রাজনীতির মাঠে থেকে দলকে সংগঠিত করতে কোনো নেতা এখনো সাহস দেখাতে পারেননি।
প্রশ্ন হচ্ছে, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভুল স্বীকার বা কোনো অনুশোচনা না করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার ওপর ভরসা করে দলটির পক্ষে সহসাই ঘুরে দাঁড়ানো কী সম্ভব?
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতিও মানুষের আস্থার সংকটও রয়েছে, সে ব্যাপারেও তাদের বিকল্প কোনো চিন্তা নেই বলে মনে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, দলটিতে এখনো শেখ হাসিনার একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তার নেতৃত্বেই দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে।
তবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দলের রাজনীতিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছেন। দলটির নেতাদের অনেকের ধারণা, তাদের নেত্রীর নেতৃত্বে সজীব ওয়াজেদ জয়কে সামনে রেখে দলটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এখন ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এই সরকার আওয়ামী লীগ ও এর মিত্র দলগুলোর এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ রাখছে না এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন হবে না, এই বক্তব্য নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত দলটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও দেশের ভেতরে জনমত তৈরির চেষ্টা করবে বলেও এর নেতারা বলছেন।
তারা মনে করেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বড় অংকের ভোট আছে, সেকারণে নির্বাচনে তাদের দলকে বাইরে রাখা হলে তা বড় ইস্যু হবে।
কিন্তু দেশে-বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সামাজিক মাধ্যমে এখন ব্যাপক তৎপর হলেও মাঠের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান নেই। এমন কঠিন বাস্তবতায় নির্বাচন ঘিরে মাঠে দলটি সক্রিয় হওয়ার কোনো সুযোগ পাবে কি না, এই প্রশ্নও রয়েছে বিশ্লেষকদের।