Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

ঐতিহাসিক মতামতে জাতিসংঘ আদালত বলল, জলবায়ু সংকট ‘অস্তিত্বহীনতার হুমকি’

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

ঐতিহাসিক মতামতে জাতিসংঘ আদালত বলল, জলবায়ু সংকট ‘অস্তিত্বহীনতার হুমকি’

ভানুয়াতুর পোর্ট ভিলায় একসময় বিখ্যাত হলিডে ইন ভিলাগুলো এখন ঝড় ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আংশিক ডুবে গেছে, আর ফিরিয়ে আনা যাবে না আগের রূপ \[ছবি: আনিকা হামারশ্লাগ / এপি]

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, প্রতিটি দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি কোনো দেশ জলবায়ু নিয়ে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে। ভবিষ্যতে এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারবে।

বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের পিস প্যালেসে দেওয়া এক ঐতিহাসিক মতামতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে বলেছে, জলবায়ু সংকট একটি অস্তিত্বহীনতার হুমকি। এটি ঠেকাতে দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।

আইসিজের প্রেসিডেন্ট ইউজি ইওয়াসাওয়া মতামত পাঠ করতে গিয়ে বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণ যে মানব ক্রিয়াকলাপ, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, কোনো দেশ যদি জলবায়ু সুরক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিকভাবে অন্যায় কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জলবায়ু সংকটকে তিনি “পৃথিবীর সব প্রাণের জন্য হুমকি” এবং “গ্রহের স্বাস্থ্যকে বিপন্নকারী সমস্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেন।

আদালত বলেছে, “পরিচ্ছন্ন, সুস্থ ও টেকসই পরিবেশ” মানুষের মৌলিক অধিকার। এই মন্তব্য ভবিষ্যতে আদালতে দায় চাপানোর পথ খুলে দিচ্ছে, যেখানে দেশগুলো একে অপরকে আন্তর্জাতিক আইনে দায়ী করতে পারবে। যদিও এই মতামত বাধ্যতামূলক নয়, তবে আইসিজে বলেছে, দেশগুলোকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী নিজেদের পদক্ষেপ বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশেষভাবে আদালত বলেছে, উন্নত দেশগুলোকে তাদের অতীতের নিঃসরণের জন্য বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, এসব দেশ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা অবশ্যই সময়ের সঙ্গে আরও শক্তিশালী, উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্য পূরণে এটি জরুরি।

এই রায় ঘোষণার পর পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো একে স্বাগত জানিয়েছে। অক্সফামের জলবায়ু নীতির প্রধান নাফকোটে ডাবি বলেন, এই রায় প্রমাণ করেছে, জীবন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি দেশের নির্গমন কমানো বাধ্যতামূলক। ধনী দেশগুলোকে আরও দ্রুত জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা বাড়াতে হবে। এটা কোনো কল্পনার বিষয় নয়, এটা আন্তর্জাতিক আইন।

গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের আইন উপদেষ্টা ডানিলো গাররিদো বলেন, এই রায় বৈশ্বিক জলবায়ু জবাবদিহিতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। তার ভাষায়, আদালতের বার্তা স্পষ্ট—জ্বালানি উত্তোলন, ব্যবহার ও তাতে অর্থসাহায্য সবই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের আওতায় আসতে পারে। যারা দূষণ করছে, তাদের থামতে হবে এবং ক্ষতির জন্য মূল্য দিতে হবে।

এই রায়টি এসেছে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র বনুয়াটুর নেতৃত্বে আনা একটি মামলার প্রেক্ষিতে। প্রায় ১৩০টি দেশ এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিল। ২০২৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আইসিজেকে একটি মতামত দেওয়ার আহ্বান জানায়—দেশগুলো কীভাবে জলবায়ু সুরক্ষায় দায়িত্বশীল হবে এবং যেসব দেশ এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের কী পরিণতি হতে পারে।

আদালতের ১৫ জন বিচারক সর্বসম্মতভাবে এই মতামত দিয়েছেন। তারা হাজার হাজার পৃষ্ঠার লিখিত প্রস্তাবনা এবং দুই সপ্তাহের মৌখিক শুনানি বিশ্লেষণ করে এই রায় দেন। আইসিজে বলেছে, প্যারিস চুক্তির বাইরেও দেশের ওপর আরও বড় দায়িত্ব আছে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো বড় বড় দূষণকারী দেশগুলো আদালতে বলেছিল, শুধুমাত্র প্যারিস চুক্তিই তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে যথেষ্ট। কিন্তু আদালত তা নাকচ করেছে।

অক্সফামের নাফকোটে ডাবি বলেন, এখন আমরা হাতে পেয়েছি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা দিয়ে দেশগুলোর দায়িত্ব নির্ধারণ করা যাবে—বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্বল ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। সূত্র: আল জাজিরা

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন