Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

ট্রাম্পের হুমকি: শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার কী সমস্যা হতে পারে

Icon

অ্যালেক্স কোজুল রাইট

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

ট্রাম্পের হুমকি: শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার কী সমস্যা হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে একপ্রকার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়া শান্তিচুক্তিতে না আসে, তাহলে তাদের ওপর কঠিন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপ করা হবে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হবে।

এই ঘোষণা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এক নতুন মোড়ের ইঙ্গিত দেয়। কারণ কিছু সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনীয় শহরগুলোর ওপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর ট্রাম্প তার অবস্থানে পরিবর্তন আনেন।

তিনি বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ। পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনায় সৌহার্দ্যপূর্ণ ভাব থাকলেও, রাতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়—এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নতমানের অস্ত্র তৈরি করে ন্যাটোর কাছে পাঠানো হবে এবং তাদেরই তা অর্থায়ন করতে হবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, “যদি ৫০ দিনের মধ্যে কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে রাশিয়ার ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।” সেইসঙ্গে তিনি ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’-এর হুমকিও দেন, যার আওতায় রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা অন্য দেশগুলোকেও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।

ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতির জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য ট্রাম্পের হুমকিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। রুশ নিরাপত্তা কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, এ ধরনের ‘নাটকীয় আল্টিমেটাম’-এর কোনো মানে নেই। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন বিষয়টি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন মনে করলে মন্তব্য করবেন।

এদিকে, ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, কানাডা, জার্মানি, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা চুক্তির অংশ হতে চায়।

ট্রাম্পের ঘোষণায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে চায়, অন্যদিকে ইউক্রেনকে সহায়তার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করতে চায়।

বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনীতির বড় একটি অংশ নির্ভর করে জ্বালানি রপ্তানির ওপর। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এরই মধ্যে ২১ হাজারের বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস কিনে যাচ্ছে, ফলে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা অনেকটাই সীমিত রয়ে গেছে।

নতুনভাবে ঘোষিত ‘সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা’ কার্যকর হলে শুধু রাশিয়া নয়, যারা রাশিয়ার পণ্য কেনে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামে।

বিশ্লেষক কিয়ারান টমকিনস জানিয়েছেন, যদি এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে রাশিয়ার রপ্তানি আয় প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে, যা দেশটিকে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে ফেলতে পারে।

ট্রাম্পের ৫০ দিনের সময়সীমা এখন রাশিয়ার সামনে এক কঠিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়—পুতিন এই হুমকিকে গুরুত্ব দিয়ে শান্তিচুক্তির পথে এগোন, নাকি আরও জটিলতা তৈরি হয়।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন