Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

পাসের হার কেন কমে গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম

পাসের হার কেন কমে গেল

এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল গত দেড় দশকে সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যেখানে গত বছর ছিল ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এই ধসের পেছনে অনেকগুলো কারণ উঠে এসেছে।

এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি — ৭৩ হাজার ৬১৬ জন, আর ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সবচেয়ে ভালো ফল করেছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড (৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ), আর সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে বরিশাল বোর্ড (৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ)। অন্যান্য বোর্ডেও পাসের হার কমেছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ ও বরিশাল বোর্ডে ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে।

শিক্ষাবিদ ও বোর্ড কর্মকর্তাদের মতে, এই খারাপ ফলের পেছনে কয়েকটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, দীর্ঘদিনের করোনাজনিত ছুটির কারণে ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবার গণিত ও ইংরেজির মতো বিষয়ে পাসের হার অনেক কমে গেছে। তৃতীয়ত, আগের বছরের মতো নমনীয়তা এবার দেখানো হয়নি। বরং উত্তরপত্র মূল্যায়নে 'যার যা প্রাপ্য, তাই' নীতিতে চলে খাতা দেখা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এবার পরীক্ষকদের কোনো চাপ দেওয়া হয়নি বেশি নম্বর দিতে। ভেন্যু কেন্দ্রে নিজেদের শিক্ষার্থীদের খাতা দেখার সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে। ফলে খাতা মূল্যায়ন হয়েছে নিরপেক্ষভাবে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অভ্যুত্থানের পর শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, আগে ফলাফল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রকাশ করা হতো, এবার সেটা বন্ধ হয়েছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণেও ফল খারাপ হতে পারে। অনেক পরিবার কোচিং বা বাড়তি পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে পারেনি।

এবার গণিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। ঢাকা বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, যেখানে বাংলা, আইসিটি বা রসায়নে তা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের কাছাকাছি।

সব মিলিয়ে এবার পাস করেছে মোট ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। গতবারের তুলনায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন কম। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে হয়েছে ৯৮৪টি, আর যারা একজনও পাস করেনি, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩৪টি।

বিভিন্ন শিক্ষা বিশ্লেষক মনে করছেন, পাসের হার বা জিপিএ ৫ পাওয়া নয়, শিক্ষার্থীরা আদৌ কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে — সেটিই আসল প্রশ্ন হওয়া উচিত।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন